" আত্মহত্যা "
আত্মহত্যা মানে হচ্ছে নিজেকে নিজেই ধ্বংস করে দেওয়া।
আচ্ছা আত্মহত্যা ই কি সবকিছুর শেষ সমাধান!!! হ্যাঁ আমাদের জীবনে হতাশা আসতেই পারে। এটা আসবেই। আর এই হতাশা কে কাবু করেই আমাদের সামনে গিয়ে যেতে হবে। হতাশায় কাবু হয়ে নয় হতাশা কে কাবু করে চলা শিখতে হবে। আসলে অনেক সময় জীবনের হতাশার এমন একটা পর্যায় আসে যখন হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিটা আর বাচার ইচ্ছা রাখে না। সে নিজেকে আত্মহ্যতার মত জঘন্য কাজের দিকে অগ্রসর হয়।
আচ্ছা, তুমি যে জন্য ডিপ্রেশনে আছো সেটা কারো কাছে শেয়ার কর। আর যাই হোক অন্তত বাবা-মায়ের কাছে। এ গোটা পৃথিবীতে তুমি তোমার বাবা মায়ের মতন পরম বন্ধু কোথাও পাবা না। তাই সবকিছুই বাবা মাকে শেয়ার করতে শিখ। যদি বাবা মা কে খুব ভয় পাও তাহলে তোমার খুব কাছের ভালো বন্ধুটিকে সব জানাও বা কোনো বড় ভাই বোন কে দেখবে তারা তোমায় সঠিক পথ দেখাবে। হতাশাগ্রস্ত হলে কখনোই একা থাকবা না। কখনোই আড়াল করবা না বিষয় টা। কাউকে না কাউকে শেয়ার করবে।
মনে রাখবে, তুমি যত আড়াল করবা তত তুমি ডিপ্রেশনের অতলে চলে যাবা।
যখন তুমি খুব ডিপ্রেশন পড়ে যাবা তখন তুমি ওযু করে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ে ফেলবা দেখবা কত প্রশান্তি 🤗 তুমি হতাশ হচ্ছো? আর আল্লাহতালা দেখো কি বলছেনঃ
আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ যাবতীয় অপরাধ মার্জনা করেন।’ (সূরা জুমার; ৫৩ আয়াত)।
[ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কখনো ডিপ্রেশনে পড়ে যাও, আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা মাথায় আসে আমাকে মেসেজ করতে ভুলবে না। যেকোনো সময় নক দিবে ]
এখন আমরা দেখবো আত্মহত্যা সম্পর্কে কোরান ও হাদিস কি বলে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে এরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা আত্মহত্যা কর না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল। [সুরা নিসা : ২৯]
আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন: ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ [সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০]
আল্লাহ আল কোরআনে বলেছেন- ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কর না।’ (সূরা বাকারা; ১৯৫ আয়াত)।
রাসূল সাঃ আত্মহত্যা করার ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন-
ﻋَﻦْ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ , ﻋَﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﺗﺮﺩﻯ ﻣﻦ ﺟﺒﻞ , ﻓﻘﺘﻞ ﻧﻔﺴﻪ , ﻓﻬﻮ ﻓﻲ ﻧﺎﺭ ﺟﻬﻨﻢ ﻳﺘﺮﺩﻯ ﻓﻴﻬﺎ ﺧﺎﻟﺪﺍ ﻣﺨﻠﺪﺍ ﻓﻴﻬﺎ ﺃﺑﺪﺍ , ﻭﻣﻦ ﺗﺤﺴﻰ ﺳﻤﺎ , ﻓﻘﺘﻞ ﻧﻔﺴﻪ , ﻓﺴﻤﻪ ﻓﻲ ﻳﺪﻩ ﻳﺘﺤﺴﺎﻩ ﻓﻲ ﻧﺎﺭ ﺟﻬﻨﻢ ﺧﺎﻟﺪﺍ ﻣﺨﻠﺪﺍ ﻓﻴﻬﺎ ﺃﺑﺪﺍ , ﻭﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﻧﻔﺴﻪ ﺑﺤﺪﻳﺪﺓ , ﺛﻢ ﺍﻧﻘﻄﻊ ﻋﻠﻲ ﺷﻲﺀ , ﻳﻌﻨﻲ ﺧﺎﻟﺪﺍ , ﻛﺎﻧﺖ ﺣﺪﻳﺪﺗﻪ ﻓﻲ ﻳﺪﻩ ﻳﺠﺄ ﺑﻬﺎ ﻓﻲ ﺑﻄﻨﻪ ﻓﻲ ﻧﺎﺭ ﺟﻬﻨﻢ ﺧﺎﻟﺪﺍ ﻣﺨﻠﺪﺍ ﻓﻴﻬﺎ ﺃﺑﺪﺍ
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে, যে ব্যক্তি লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের মধ্যে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তার দ্বারা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৪৪২, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১৯৬৪}
আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।
আত্মহত্যা তো দূরে থাক, মৃত্যু কামনাও বৈধ নয়
আত্মহত্যা তো দূরের কথা আমাদের পবিত্র এই শরীয়ত কোনো বিপদে পড়ে বা জীবন যন্ত্রনায় কাতর হয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করতে পর্যন্ত বারণ করেছে। যেমন আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘তোমাদের কেউ যেন কোনো বিপদে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা না করে। মৃত্যু যদি তাকে প্রত্যাশা করতেই হয় তবে সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ আমাকে সে অবধি জীবিত রাখুন, যতক্ষণ আমার জীবনটা হয় আমার জন্য কল্যাণকর। আর আমাকে তখনই মৃত্যু দিন যখন মৃত্যুই হয় আমার জন্য শ্রেয়।’ [বুখারী : ৫৬৭১; মুসলিম : ৬৯৯০]
মানুষ কেন এবং কখন আত্মহত্যা করে?
ভাববার বিষয় হলো মানুষ কখন আত্মহত্যা করে ? যখন মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি ও উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজেকে সে অসহায় ও ভরসাহীন ভাবে, তখনই সে আত্মহত্যা করে বসে। নানা সমস্যায় পড়ে মানুষ আত্মহত্যার এ নিন্দিত পথ বেছে নেয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কলহ এবং যৌতুক নিয়ে ঝগড়া-বিবাদকে কেন্দ্র করে আত্মহত্যা।
অভিভাবক তথা পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে অভিমানজনিত আত্মহত্যা।
মানসিক রোগ
পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার প্রতিকিয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মহত্যা।
আরোগ্য থেকে হতাশ হয়ে জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্থ যন্ত্রণাকাতর ব্যক্তির আত্মহত্যা।
প্রেমে বা ভালোবাসায় ব্যর্থ বা প্রতারিত ও মিথ্যা অভিনয়ের ফাঁদে পড়া নারী বা পুরুষের আত্মহত্যা।
ব্যবসা-বাণিজ্যে বা শেয়ার বাজারে বারবার ব্যর্থ হওয়া মানুষ বা তরুণ-যুবার আত্মহত্যা।
প্রতাপশালী শক্রর হাতে ধরা পড়া থেকে বাঁচতে আত্মহত্যা ইত্যাদি।
আত্মহত্যা রোধে করণীয়
মানুষের জীবনের প্রতিটি দিন এক রকম কাটে না। ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন সর্বত্রই পরিবর্তন হতে থাকে। কখনো দিন কাটে সুখে, কখনো কাটে দুঃখে। কখনো আসে সচ্ছলতা। আবার কখনো দেখা দেয় দরিদ্রতা। কখনো থাকে প্রাচুর্য কখনো আবার অভাব-অনটন। কখনো ভোগ করে সুস্থতা কখনো আক্রান্ত হয়ে পড়ে রোগ শোকে। কখনো দেখা দেয় সুদিন, আবার কখনো আসে দুর্ভিক্ষ। কখনো আসে বিজয়, আবার কখনো আসে পরাজয়। কখনো আসে সম্মান আবার কখনো দেখা দেয় লাঞ্ছনা। এ অবস্থা শুধু বর্তমান আমাদের সময়েই হয়ে থাকে, তা নয়। এটা যুগ যুগ ধরে এভাবেই আবর্তিত হয়ে আসছে।
আল্লাহ যেমন বলেন: ‘তারপর আমি মন্দ অবস্থাকে ভাল অবস্থা দ্বারা বদলে দিয়েছি। অবশেষে তারা প্রাচুর্য লাভ করেছে [সূরা আল-আরাফ, আয়াত ৯৫]
যেহেতু বিপদ-আপদ, কষ্ট-শোক আমাদের নিত্যসঙ্গী তাই সমাজ থেকে আত্মহত্যা নির্মূলে প্রথমত দরকার পুরো সমাজ ব্যবস্থায় ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের বাস্তব অনুশীলন। কারণ, মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় হতাশার চরম মুহূর্তে। আর অনুশীলনরত মুসলিম জীবনে হতাশার কোনো স্থান নেই।
আল্লাহ বলেন: বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। [সূরা আয-যুমার, আয়াত : ৫২]
যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যাবতীয় ভালো-মন্দ সবই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। এবং আল্লাহ যা-ই করেন বান্দার তাতে কোনো না কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে, সে কখনো নিজের জীবন প্রদীপ নিজেই নিভাবার মত হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সে তো হাজার বিপদেও অবিচল থাকবে এ বিশ্বাসে যে আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করছেন। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে অবশ্যই তিনি আমাকে পুরস্কৃত করবেন।
তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রথমত দরকার ইসলামী শিক্ষা এবং দৈনন্দিন জীবন ইসলামের বাস্তবানুশীলন।
------------------------------------------------------------------------------------